• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

লেটুস পাতা চাষে ঝুঁকছেন যশোরের চাষিরা

  • ''
  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২৪

যশোর প্রতিনিধি:

নিরাপদ উচ্চমূল্যের সবজি' চাষের আওতায় বিদেশি 'লেটুসপাতা' চাষে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন যশোরের শার্শার চাষিরা। শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এ বছর চাষ হয়েছে বিদেশি এই লেটুসপাতার।শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা  তরুন কুমার বালা বলেন,গতানুগতিক অলাভজনক ফসলের চাষ থেকে বেরিয়ে শার্শার কৃষকরা নিরাপদ উচ্চমূল্যের বিদেশি নতুন নতুন জাতের ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

প্রাচীন মিসরীয়রা আগাছা থেকে সর্বপ্রথম লেটুসের আবিষ্কার করেন তারপর গ্রিক এবং রোমানদের কাছে তেলসমৃদ্ধ বীজের কারণে এই উদ্ভিজ্জ লেটুসপাতা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা লেটুসের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে।

 উপজেলার পানবুড়ি গ্রামের যদুনাথপুর (হাড়িখালি) ব্লকের কৃষি জমিগুলোতে বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী শাক-সবজির পাশাপশি ২০শতক জমিতে চাষ হচ্ছে এক সময়ের চাইনিজ এ লেটুসপাতার। 

লেটুসপাতা চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে চাষি লিপি খাতুন জানান,লেটুসপাতা চাষের জন্য জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হয়। লেটুস দুইভাবে চাষ করা যায়। সরাসরি বীজ বুনে আবার বীজতলায় বপন করে উপযুক্ত বয়সের চারা (এক মাস বয়সের) মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব রাখতে হবে ৮ ইঞ্চি।

অপর চাষি শার্শা ইউনিয়নের দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমাদের এখানে যে লেটুসপাতার চাষ হয় এটা গ্রীন র্যাপিড জাতের।বিদেশি এই লেটুসপাতা চাষের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় এই চাষি। অবশ্য এই বীজ ঢাকার সিদ্দিক বাজারে পাওয়া যায়। বীজগুলো চড়া দামে কিনে আনতে হয়। লেটুসপাতা লাগানোর এক দেড় মাসের মধ্যেই খাবারের উপযুক্ত হয়ে যায়।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিসেস সুলতানা পারভীন বলেন,শীতপ্রধান দেশে সারা বছর লেটুসের চাষ হলেও আমাদের দেশে কেবল রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় বীজ বোনা যেতে পারে।শার্শায় চাষ শুরু হয়েছে। প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে লেটুসপাতার স্থানীয় বাজার তৈরি করতে পারলে চাষিরা ব্যাপক লাভবান হবেন বলে মনে করেন তিনি।

লেটুস চাষি রোকুনুজ্জামান বলেন,স্থানীয় পর্যায়ে লেটুসপাতার ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারনা কম থাকায় বেচাবিক্রি কিছুটা কম তবে ঢাকার যাত্রাবাড়ী শ্যামবাজার কাওরানবাজারে পিস হিসেবে বিক্রি হয়। প্রতি পিস ১০-৫০ টাকা হারে বিক্রি করা যায় লেটুসপাতা। এই পাতা চাষে তেমন খরচ গুনতে হয়না। শ্রমিকের মজুরি,জমি চাষ,সার, কীটনাশক ও নানা আনুষঙ্গিক খরচ আয়ত্তের মধ্যেই থাকে। আর বারো মাসই চাষের উপযুক্ত বলে এখানে অন্যান্য শাক সবজির পাশাপাশি লেটুসপাতার চাষ বেড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারন প্রকল্পের অধিনে 'নিরাপদ উচ্চমূল্যের সবজি' উৎপাদন প্রদর্শনী হিসেবে উপজেলায় একশ' ৩২ শতক জমিতে লেটুসপাতা চাষ হয়েছে। লেটুসপাতা চাষে কৃষি অফিস থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।এর বাইরে কেউ যদি কোনো পরামর্শ ও সহযোগিতা চান আমরা দিতে আগ্রহী।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘লেটুসপাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি রয়েছে। তাই এটি বেশ উপকারী সুষম খাদ্য।’

শার্শা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পুষ্টিবিদ রেবেকা সুলতানা শিল্পী বলেন, সাধারণত সালাদ,বার্গারের ভেতরে বা স্যান্ডউইচের মাঝে দিয়ে লেটুস পাতা খেয়ে থাকেন।লেটুস কাঁচা ও রান্না উভয়ভাবেই খাওয়া যায়। এতে নানা রকম ভিটামিন ছাড়াও রয়েছে একেবারে কম ক্যালরি।লেটুসপাতা বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন চাইনিজ রেস্তোরাঁয় বহু সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে ও খাবারের পাশে ডেকোরেশনের জন্য ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে লেটুসপাতার চাহিদা অত্যন্ত বেশি।তৈলসম্পদে ভরপুর কুয়েত,সৌদি আরব, দুবাই,কাতারে এ পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। এই লেটুসপাতা দৈনন্দিন জীবনে ভোজনরসিকরা প্রায় প্রতিবারের খাবার তালিকায় আগ্রহ নিয়ে খেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads